Wednesday, September 30, 2020

নমায সম্পর্কিত কিছু কথা (Some Important Things Related to Namaaz)

 নমায সম্পর্কিত কিছু কথা

 নমায সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই, কারণ কম-বেশি আমরা প্রত্যেকেই নমাযের গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা তা জানি, আবার এটাও বলা যায় যে নমাযের গুরুত্ব ও ফজিলত কতটা তা আমরা জানি না, কারণ যদি জানতাম তাহলে নমাযের প্রতি এতটা অবহেলা করতাম না ॥
            সে যাই হোক এটা আমাদের জেনে রাখা দরকার যে ইমান ও আক্বিদার পর যা কিছু ফরয করা হয়েছে আমাদের ওপর তার মধ্যে নমায সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পবিত্র কুরআন মযিদ ও বিভ্ন্ন হদীসে নমাযের নির্দেশ বার বার এসেছে ॥ মনে রাখা দরকার যদি কেউ নমাযকে ফরয হিসেবে অস্বীকার করে অথবা নমাযকে মর্যাদা না দেয় কিম্বা নমাযকে একটা ছোটো বিষয় ভেবে নমাযের প্রতি অমনোযোগী হয়, তাহলে সে কাফির তথা ইসলাম থেকে খারিজ অর্থাৎ বহিস্কূত হয়ে যাবে এবং কঠোর শাস্তির অধিকারী হবে ॥ (দর্রে মুখতার ও রদ্দুল মুখতার জিল্দ ১ সফহা ২৩৫)
            নমাযে দাঁডানো অথবা নমায শুরু করার আগে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো সম্পর্কে একটা সঠীক ধারনা ও জ্ঞান থাকা দরকার ॥ আর এই বিষয়গুলি শুধুমাত্র নমাযিদের জন্যই নয় এগুলো তো প্রতিটি মুসলিমের জানা দরকার, কারণ এগুলো ইসলামের ABC , তাই নীচে এই সমস্ত বিষয়গুলি  সংক্ষেপে আলোচোনা করা হল................

ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মকরুহ্, মুস্তাহব এবং হরাম ও হলাল কী ?

 ফরয- 

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো আল্লাহ (অ য) পবিত্র কুরআনের মধ্য দিয়ে আমাদের করার হুকুম দিয়েছেন, সেই বিষয় বা কাজগুলো হল ফরয ॥ ফরয দুই প্রকারের, (১) ফরয-এ-অইন ও (২) ফরয-এ-কিফায়া ॥ যেগুলো আমাদের ওপরে ফরয সেগুলো সঠীক সময়ে ও সঠীক ভাবে আদায় করতেই হবে এবং তাই ফরয কে অস্বীকার করলে কাফির হতে হয় ॥ ফরযের একটি উদাহরণ হল ফজরের ২ রিকাত ফরয নমায ॥

ওয়াজিব- 

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো শরিয়তের জনি দলিল থেকে প্রমানিত, সেই বিষয় বা  কাজগুলো হল ওয়াজিব ॥ বিশেষ কারণ ব্যাতিত ওয়াজিব আদায় না করলে ফাসিক হতে হয়, কিন্তু  ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফির হতে হয় না ॥ ওয়াজিবের একটি উদাহরণ হল ঈদের নমায ॥

সুন্নত- 

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো রসুলুল্লাহ (স আ স) নিজে করেছেন এবং আমাদের করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই বিষয় বা কাজগুলো হল সুন্নত ॥ সুন্নত দুই প্রকারের, (১)সুন্নত-এ-মুয়াকিদা ও (২)সুন্নত-এ-গৈর মুয়াকিদা ॥ আল্লাহ (অ য) র প্রিয় রসুলের একজন অনুগামী ও একজন রসুল প্রেমী হিসেবে আমাদের উচিৎ যেন আমরা তার হিকমত ভরা সুন্নতগুলি যথাযথ পালন করি ॥ সুন্নতের একটি  উদাহরণ হল ফজরের ২ রিকাত সুন্নত নমায ॥

মকরুহ্-  

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো নিষিদ্ধ এবং শরিয়তের জনি দলিল থেকে প্রমানিত, সেই বিষয় বা কাজগুলো হল মকরুহ্ ॥ মকরুহ্ দুই প্রকারের, (১)মকরুহ্ তহরিমি ও (২)মকরুহ্ তনযিহ্ মকরুহ্ তহরিমি ওয়াজিবের বিপরীত অর্থাৎ ওয়াজিব আদায় না করলে যে গুনাহ হয় ঠিক মকরুহ্ তহরিমি করলে সেই গুনাহ্ হয় ॥

মুস্তাহব- 

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো শরিয়ত হিসেবে করা উত্তম আবার না করলে খারাপ বা মন্দও নয় সেই বিষয় বা কাজগুলো হল মুস্তাহব ॥ আমাদের উচিৎ মুস্তাহব আমলগুলো যথাসম্ভব করার চেষ্টা করা ॥ মুস্তাহবের একটি উদাহরণ হল ক্বিবলার দিকে মুখ করে ওযু করা ॥

 হরাম - 

ঐ সমস্ত বিষয়গুলো, যেগুলো আল্লাহ (অ য) পবিত্র কুরআনের মধ্য দিয়ে আমাদের না করার হুকুম দিয়েছেন অর্থাৎ নিষেধ করেছেন, সেই বিষয় বা কাজগুলো হল হরাম ॥ যে সমস্ত কাজ গুলো আমাদের ওপরে হরাম সেগুলো কোনো অবস্থাতে করা উচিৎ নয় ॥  হরাম হল ফরযের বিপরীত আমল অর্থাৎ ফরয আদায় না করলে যে গুনাহ হয় ঠিক হরাম কাজ করলে সেই গুনাহ্ হয় ॥ হরামের একটি উদাহরণ হল ঈদের দিন রোযা রাখা ॥

নমাযের ফরয:

 নমাযের মধ্যে মোট ৭ টি ফরয আছে এবং মনে রাখতে হবে এগুলির একটাও যদি নমাযের মধ্যে  ছেডে দেওয়া হয় তো নমায কোনোও মতে হবে না ॥ যথাক্রমে এগুলো হল ১- তকবীর-এ-তহরিমা, ২- কয়াম, ৩- ক্বিরাত, ৪-রুকু, ৫-সজদাহ্, ৬- কায়দা-এ-আখির এবং ৭- কোনোও ভালো কাজ করে  নমায শেষ করা ॥

 নমাযের শর্ত:

নমায শুরু করার জন্য অথবা বলা যায় যে নমায শুরু করার আগে কয়েকটা জিনিস খুবই জরুরী এবং এই জরুরী বিষয়গুলিকে নমাযের শর্ত বলা হয় ॥ নমাযের মধ্যে মোট ৭ টি শর্ত আছে ॥ যথাক্রমে এগুলো হল ১- পবিত্র হওয়া, ২- লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখা, ৩- নমাযের সঠীক সময়, ৪- ক্বিবলার দিকে  মুখ করা, ৫-নিয়ত এবং ৬- তকবীর-এ-তহরিমা ॥

নমাযের সুন্নত:

নমাযের সুন্নতগুলোর মসলা এরকম যে যদি ভুলবশতঃ নমাযের মধ্যে কোনোও সুন্নত ছাডা হয়ে যায় তো তার জন্য সজদাহ্ সহ্ করা অথবা নমায ঘুরিয়ে পডার দরকার নেই তবে ঘুরিয়ে পডে নেওয়া ভালো কারণ নমাযের সুন্নত ছেডে দেওয়ায় নমাযের সওয়াব কম করে দেয় ॥ নমাযের কয়াকটি সুন্নত হল ১- তকবির-এ-তহরিমাতে হাত কান পর্যন্ত ওঠানো, ২- তকবিরের সময় মাথা না ঝুকানো, ৩- হাত এবং আঙ্গুলের সামনের দিক ক্বিবলার দিকে থাকা, ৪- তকবির বলার সময় হাত ওঠানো, ৫- তকবিরের পর হাত না ঝুলিয়ে তহরিমা বাঁধা, ৬- দুয়া সনা, বিসমিল্লাহ্ ও আমীন পডা, ৭- এগুলো ধীরে ধীরে পডা,  ৮- প্রথমে সনা তারপর আউযবিল্লাহ্ এবং তারপর বিসমিল্লাহ্ পডা, ৯- রুকতে তিনবার সুবহানা রব্বিয়ল অযিম বলা, ১০- হাঁটুকে হাত দিয়ে ধরা, ১১- আঙ্গুলগুলোকে খুব খোলামেলা রাখা, ১২- রুকুর সময় পা সোজা রাখা, ১৩- রুকুর জন্য আল্লাহ্ অকবর বলা, ১৪-রুকর সময় পিঠকে সোজা রাখা, ১৫-রুকুর থেকে ওঠার সময় ইমামকে বলতে হবে সমিয়াল্লাহ্ লিমন্ হমিদাহ্, ১৬- ইমামের পেছনে নমায পডলে রুকর থেকে ওঠার সময় রব্বানা লকল্ হমদ্ বলা এবং একলা নমায পডলে দুটোই বলা, ১৭- সজদার জন্য আল্লাহ্ অকবর বলা, ১৮- সজদাতে অন্তত তিনবার সুবহানা রব্বিয়ল আলা বলা, ১৯- সজদাহ্ করার সময় যথাক্রমে হাঁটু, হাত, নাক এবং মাথা নামানো, ২০- সজদাহ্ থেকে ওঠার সময় ঠীক এর বিপরীত করা, ২১- ছেলেদের সজদার সময় কুনুই মাটিতে না রাখা, ২২- দুই সজদার মাঝে একটু বসা, ২৩- দুই সজদার মাঝে বসার সময় হাত ঊরুর উপর রাখা, ২৪- সজদার সময় হাতের আঙ্গুল ক্বিবলার দিকে হওয়া ওবং মিলিত ভাবে থাকা, ২৫-সজদার সময় পায়ের দশ আঙ্গুলের পেট সামনের দিকে হওয়া, ২৬-দ্বিতীয় রকাতে ওঠার জন্য হাতের পান্জার ভরে হাঁটুতে হাত দিয়ে দাঁডানো, ২৭- ছেলেদের জন্য তশহুদে বসার সময় ডান পা দাঁড করিয়ে এবং বাম পা বিছিয়ে রাখা, ২৮- অত্তাহিয়াতের সময় শাহাদত আঙ্গুলে ইশারা করা এবং কায়দা-এ-আখিরে অত্তাহিয়াতের পর দরুদ শরিফ ও দুয়া মাসুরা পডা ॥

নমাযের ওয়াজিব:

নমাযের ওয়াজিবগুলোর মসলা এরকম যে যদি ভুলবশতঃ নমাযের মধ্যে কোনোও ওয়াজিব যদি ছাডা হয়ে যায় তো নমায হবে না , সে ক্ষেত্রে সজদাহ্-এ-সহ্ করতে হবে অথবা নমায ঘুরিয়ে পডতে হবে ॥ নমাযের মধ্যে যে যে বিষয়গুলো ওয়াজিব আছে তা হল ১- তকবির-এ-তহরিমাতে আল্লাহু অকবর বলা, ২- সুরা ফাতিহা পডা, ৩- ফরজের প্রথম দুই রিকাতে এবং সুন্নত ও উইতর্ নমাযের প্রতিটি রিকাতে সুরা ফাতিহার পর অন্য একটি সুরা পডা, ৪-ফরয নমাযের প্রথম দুই রিকাতে ক্বিরাত করা, ৫-সুরা ফাতিহা  অন্য সুরার আগে পডা, ৬- প্রতি রিকাতে একবার সুরা ফাতিহা পা, ৭- সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরার মাঝে আমীন ও বিসমিল্লাহ ব্যাতিত কিছু না বলা, ৮- ক্বিরাতের সাথে সাথে রুকু করা, ৯- সজদার সময় দুই পায়ের তিনটি করে আঙ্গুল মাটিতে লেগে থাকা, ১০-দুই সজদার মাঝখানে একটু বসা, ১১-রুকুর পর সোজা হয়ে দাঁডানো, ১২- দুই রিকাতের পর অত্তাহিয়াতে বসা, ১৩- তিন এবং চার রিকাত নমাযে দুই রিকাতে অত্তাহিয়াত পডার পর অন্য কিছু না বলা, ১৪- শেষের সলাম দুইবার পডা, ১৫- উইতর নমাযে দুয়া ক্বুনুত পডা, ১৬- দুয়া ক্বুনুতের জন্য তকবির বলা, ১৭- প্রতি রিকাতে একটিই রুকু হওয়া, ১৮- প্রতি রিকাতে দুটি সজদাহ্ দেওয়া এবং ১৯- কায়দা-এ-আখিরে বসা ॥

নমাযের মকরুহ:

নমাযের মধ্যে যে বিষয়গুলো মকরুহ্ আছে ১- নমাযের অবস্থায় কাপড, শরীর, দাডি বা শরীরের কোনোও অংশের সাথে খেলা করা, ২- রুকু বা সজদার সময় দেহের কপডকে আগে অথবা পিছন থেকে টেনে নেওয়া, ৩-কোনোও এক হাতের আস্তিনকে অর্ধেক পর্যন্ত গুটিয়ে নেওয়া, ৪-ছেলে দের জন্য মাথার চুল বেঁধে নমায পডা, ৫- নমাযের মধ্যে এদিক-সেদিক তাকানো, ৬- সজদার সময় ছেলেদের কুনুইকে মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া, ৭- কায়দার মধ্যে হাতকে ঊরুর ওপর না রেখে মাটিতে রাখা, ৮- মুখ ও নাককে ঢেকে নমায পডা, ৯- বিনা প্রয়োজনে বার বার গলা ঝাডা, ১০- যেখানে নমায পডা হচ্ছে তার আশেপাশে জীব জাতীয় কিছুর ছবি থাকা, ১১- এমন পোষাক পরে নমায পডা, যেটাতে জীব জাতীয় কিছুর ছবি আছে, ১২- জলন্ত আগুনের সামনে নমায পডলে, ১৩-খোলা ছাদ বা ঘন অন্ধকারের  মধ্যে নমায পডা, ৭- পেশাব বা পায়খানার প্রেসারের মধ্যে নমায পডা ॥- ( দরে মুখতার, জিল্দ ১, সফহা ৪২৯  এবং আলমগীরী জিল্দ ১ সফহা ৯৯ )



1 comment: