Monday, November 9, 2020

নমায সম্পর্কিত কিছু কথা (Some Important Things Related to Namaaz)-02

নমায সম্পর্কিত কিছু কথা-02

বিগত POST এ নমাযের গুরুত্ব ও নমায কে অবহেলা করার শাস্তি বিষয়ক আলোচনার সাথে সাথে আমরা নমায সম্পর্কে আরোও অনেক কিছু যেমন নমাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মকরুহ্, মুস্তাহব এবং হরাম ও হলাল কী সেই সম্পর্কে আলোচোনা করেছিলাম এবার এই POST এ ইনশা অল্লাহ্ আমরা আলোচোনা করব :

1-নমায ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ, 
2-মহিলাদের নমাযের কিছু পার্থক্য, 
3-স্নান ও ওযুর ফরয, 
4-জুম্মার নমায, 
5-তরাবীর নমায,  
6-সজদা-এ-সহ্ কিভাবে আদায় করব ও
7-নমায কিভাবে পডব

এর আগের নমায সম্পর্কিত POST দেখার জন্য এখানে করুন

এবার আমরা এক এক করে উপরাউক্ত বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচোনা করব

                  1-নমায ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ               

নমাযের মধ্যে জেনে হোক বা না জেনে , স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় কথা বললে নমায ভেঙ্গে  যায়, ২- নমাযের তকবিরে অল্লাহু অকবরকে টেনে আল লাহু কিম্বা আক বর অথবা অকবার বললেও নমায ভেঙ্গে যায়, ৩- নমাযের মধ্যে আহ্, উহ্, উফ্ ইত্যাদি বললে, ৪- নমাযের মধ্যে যদি খুব জোরে কাঁদা হয় এবং এর ফলে কিছু হুরুফ বেরিয়ে আসে 

                2-মহিলাদের নমাযের কিছু পার্থক্য         

১- তকবির-এ-তহরিমাতে মহিলাদের হাতকে পুরুষদের মতো কান পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে শুধু কাঁধে হাত লাগিয়ে অল্লাহু অকবর বলে বুকের ওপরে হাত এভাবে রাখতে হবে যেন বাম হাতের ওপরে ডান হাত থাকে ॥
২-রুকুতে মহিলাদের খুব বেশি ঝুঁকে পুরুষদের মতো পিঠকে সোজা করার দরকার নেই, হাঁটুতে কোনোরকম হাত পৌঁছে যাওয়ার মতো ঝুঁকলেই হল ॥
৩- সজদাতে মহিলাদের খুব বেশি খোলামেলা হয়ে পুরুষদের মতো সজদা না করে যতটা সম্ভব আডষ্ট হয়ে সজদা করতে হবে ॥
৪- কায়দা-এ-আখিরে পুরুষদের মতো এক পা দাঁড করা ও আর এক পা বিছিয়ে না বসে দুই পা ডান দিকে বের করে বাম পাছার ওপর বসে ॥

                           3-স্নান ও ওযুর ফরয                     

স্নান ও ওযুর ফরযগুলো এখানে আলোচোনা করা হল, এমনিতে স্নান ও ওযু নমাযের সাথে খুব গভীর ভাবে যুক্ত॥ মনে রাখতে হবে স্নান ও ওযুর ফরযগুলি ঠীকভাবে আদায় না হলে স্নান ও ওযু হবে না ॥ স্নানের তিনটি ফরয ১- নাকের মধ্যে জল ঢুকিয়ে নাক পরিস্কার করা, ২- খুব ভালো করে কুল্লি করা এবং ৩- পুরো শরীরকে ভেজানো ॥
ওযুর মধ্যে চারটি ফরয আছে, এগুলি হল ১- পুরো মুখমন্ডলকে একবার ধোওয়া, ২- কুনুই সমেত  দুই হাতকে একবার করে ধোওয়া, ৩- ভেজা হাত নিয়ে একবার মাথার মসাহ্ করা এবং ৪- টখনা সমেত দুই পাকে একবার ধোওয়া ॥

এর আগের নমায সম্পর্কিত POST দেখার জন্য এখানে করুন

                               4-জুম্মার নমায                         

জুম্মার নমায হল একটি ফরয নমায এবং একে অস্বীকারকারি কাফির ॥ হদিসে আছে পরপর তিন জুম্মা যদি কোনোও ব্যাক্তি আদায় না করে তাহলে ঐ ব্যাক্তি ইসলামকে পিঠের পেছনে ফেলে দিল এবং সে মুনাফিক্ব ॥ (ইবনে খুযয়মা ও বহারে শরিয়ত)
             জুম্মার নমায ফরয হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি হওয়া জরুরী, এগুলি হল যথাক্রমে ১- শহরে অবস্থান করা, অর্থাৎ মুসাফিরের ওপর জুম্মা ফরয নয়, ২- আজাদ বা মুক্ত হওয়া অর্থাৎ গুলামের ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৩- সুস্থ্য হওয়া অর্থাৎ এমন ব্যাক্তি যে মসজিদ পর্যন্ত যেতে অক্ষম তার ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৪- পুরুষ হওয়া অর্থাৎ মহিলাদের ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৫- বালেগ হওয়া অর্থাৎ নাবালেগদের ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৬- দেখতে পায় এমন ব্যাক্তি অর্থাৎ অন্ধ ব্যাক্তির ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৭- আকিল হওয়া অর্থাৎ পাগল ব্যাক্তির ওপর জুম্মা ফরয নয়, ৮- হাকীম অথবা জালিম কোনোও ব্যাক্তির অত্যাচারের ভয় থাকলে ॥ (মনে রাখতে হবে ঈদের নমাযের জন্যও এই শর্তগুলিই জরুরী ॥)

                               5-তরাবীর নমায                         

রমযান মাসের চাঁদ দেখা দিলেই তরাবীর নমায শুরু করতে হয়, পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই তরাবার নমায সুন্নত-এ-মুয়াক্বিদা এবং এর ছেডে দেওয়া জায়েয নয় ॥ মহিলারা ঘরের মধ্যে একলা একলা এই নমায আদায় করবে ॥তরাবী দশ সলামে ২০ রিকাত আদায় করা হয় ॥
             তরাবীর দুয়া- সুবহানা যিল মুলকি ওয়ল মলাকুতি সুবহানা যিল ইজ্জতি ওয়ল অযমতি ওয়ল হয়বতি ওয়ল কুদরতি ওয়ল কিবরিয়া ই ওয়ল জবারুত, সুবহানল মালিকিল হয়ইল লযি লা ইয়ানামু ওয়ালা য়ামুতু সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মলাইকাতু ওয়র রুহ্ ॥ (পুরুষদের জন্য তরাবীর নমায জমায়েতের সাথে  আদায় করা সুন্নত-এ-মুয়াক্বিদা ॥)

          6-সজদা-এ-সহ্ কিভাবে আদায় করব            

নমাযের মধ্যে এক বা একাধিক ওয়াজিব যদি ভুলবশতঃ ছাডা হয়ে যায় তখন তার ক্ষতিপুরণ হিসেবে সজদা-এ-সহ্ ওয়াজিব হয়ে যায় ॥ জেনে রাখতে হবে শুধু ভুলবশতঃ ছাডা হলে তবেই সজদা-এ-সহ্ করলে নমায হয়ে যাবে কিম্তু  ইচ্ছে করে নমাযের মধ্যে এক বা একাধিক ওয়াজিব ছাডলে নমায হবে না সেক্ষেত্রে নমায ঘুরিয়ে পডতে হবে ॥
সজদা-এ-সহ্ করার জন্য নমাযের শেষ ক্বায়দা অর্থাৎ ঐ নমাযের শেষ রিকাতে যেখানে পরপর অত্তাহিয়াত, দরুদ-এ-ইব্রাহিম ও দুয়া মাসুরা পডা হত সেখানে শুধুমাত্র অত্তাহিয়াত পডে ডান দিকে একটি সলাম ফেরিয়ে পরপর দুটি সজদা করতে হবে ॥ সজদা থেকে ওঠে এবার অত্তাহিয়াত, দরুদ-এ-ইব্রাহিম ও দুয়া মাসুরা পডে সাধারণতঃ যেভাবে সলাম ফেরানো হয়, সেভাবে সলাম ফিরিয়ে নমায শেষ করতে হবে ॥
মসলা- তিন ও চার রিকাত নমাযে প্রথম ক্বায়দা অর্থাৎ দুই রিকাতের পর যেখানে শুধু অত্তাহিয়াত পডতে হয় যদি সেখানে অত্তাহিয়াত পডার পর ভুলবশতঃএতক্ষন বসা হয়ে যায়, যতক্ষনে অল্লাহুম্মা সল্লি অলা মুহম্মদ পডা যেতে পারে তাহলে সজদা-এ-সহ্ ওয়াজিব হয়ে যায় ॥ তাই মনে রাখতে হবে তিন ও চার রিকাত নমাযে প্রথম ক্বায়দা অর্থাৎ দুই রিকাতের পর যেখানে শুধু অত্তাহিয়াত পডতে হয় যদি সেখানে অত্তাহিয়াত পডার সাথে সাথে তূতীয় রিকাতের জন্য ওঠে দাঁডাতে হবে ॥
               মসলা- যে রিকাতে সজদা-এ-সহ্ করার কথা ছিল কিন্তু ভুলবশতঃ অত্তাহিয়াতের পর সলাম না ফিরিয়ে অভ্যেস মতো দরুদ-এ-ইব্রাহিম পডা শুরু করে দিল কিন্তু অল্লাহুম্মা সল্লি অলা পর্যম্ত পডার পর যদি থেমে গিয়ে ডান দিকে সলাম ফিরিয়ে নিয়ে সজদা-এ-সহ্ শুরু করে দেয় তো সজদা-এ-সহ্ হয়ে যাবে কিন্তু অল্লাহুম্মা সল্লি অলা মুহম্মদ পর্যন্ত পডা হয়ে গেলে আর সজদা-এ-সহ্ হবে না সেক্ষেত্রে ঐ নমাযকে আবার ঘুরিয়ে পডতে হবে ॥

এর আগের নমায সম্পর্কিত POST দেখার জন্য এখানে করুন

                         7-নমায কিভাবে পডব                    

ওযু করে দাঁডাতে হবে  কিবলার সম্মুখে ঠিক এভাবে যেন দুই পায়ের মধ্যে চার আঙ্গুলের তফাৎ থাকে ॥ এবার দুই হাত কানের কাছে নিয়ে গিয়ে দুই হাতের বুডো আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের লৌ কে স্পর্শ্ব করতে হবে এবং বাকি আঙ্গুলগুলোকে নিজের অবস্থায় ছেডে দিতে হবে  যেন কানের লৌ স্পর্শ করার সময় দুই হাতের সামনের দিক যেন কিবলার দিকে থাকে এবং চোখ যেন থাকে সজদার জায়গায়, এবার নিয়ত করে অল্লাহু অকবর বলতে বলতে হাত নিচে নিয়ে এসে নাফের নিচে এভাবে রাখতে হবে যেন ডান হাতের তালু বাম হাতের ওপরে থাকে এবং ডান হাতের মাঝের তিন আঙ্গুল যেন বাম হাতের কবজির ওপরে থাকে ও বাকি দুই আঙ্গুল যেন বাম হাতের কবজিকে ধরে থাকে ॥ এবার ক্রমানুসার সনা, আউযুবিল্লাহ্, বিসমিল্লাহ্ ও সুরা ফাতিহা পডতে হবে এবং সুরা ফাতিহা পডার পর খুব ধীরে আমিন বলে পবিত্র কুরআন থেকে যে কোনোও সুরা বা যে কোনোও তিনটি আয়াত অথবা তিন আয়াতের সমতুল্য একটি লম্বা আয়াত পাঠ করে অল্লাহু অকবর বলে রুকুতে যেতে হবে ॥ রুকুতে হাত যেন হাঁটুর ওপরে থাকে এবং পিঠ ও মাথা যেন সোজা থাকে ॥ এবং চোখ যেন থাকে পায়ের আঙ্গুলের ওপর, এবার রুকুর তসবিহ্ পাঠ করার পর সমি অল্লাহু লিমন্ হমিদাহ্ বলে সোজা দাঁডাতে হবে আর যদি একলা নমায পডা হয়, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত রব্বনা লকল্ হমদ্ বলতে হবে ॥ এখানে হাত বাঁধা চলবে না, হাতকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে ॥  এবার অল্লাহু অকবর বলে সজদায় যেতে হবে ॥ সজদায় যাওয়ার সময় ক্রমানুসার হাঁটু, হাত, নাক ও মাথা জমিনে রাখতে হবে এবং নাক জমিনে দাবিয়ে রেখে চোখ রাখতে হবে নাকের ওপর ॥ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে এভাবে রাখতে হবে যেন সমস্ত আঙ্গুল কিবলার দিকে থাকে ও আঙ্গুলের পেটগুলো যেন জমিনে দাবা হয়ে থাকে ॥ এবার সজদার তসবিহ্ পডে অল্লাহু অকবর বলে ওঠে বসতে হবে এভাবে যেন ডান পা দাঁড করানো থাকে যার প্রতিচি আঙ্গুল কিবলার দিকে থাকে ও বাম পা বিছিয়ে রেখে তার ওপর সোজা বসতে হবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলো রানের ওপর এভাবে রাখতে হবে যেন প্রতিচি আঙ্গুল কিবলার দিকে থাকে ॥ এবার কিছুক্ষন থেমে অল্লাহু অকবর বলে দ্বিতীয় সজদায় যেতে হবে ঠিক আগের মতই ॥  দ্বিতীয় সজদা করে এবার সোজা ওঠে দাঁডাতে হবে বিপরীত ভাবে অর্থাৎ ক্রমানুসার মাথা, নাক, হাত ও হাঁটু ॥ এভাবে এক রিকাত সম্পুর্ণ করে দ্বিতীয় রিকাতে শুধু বিসমিল্লাহ্ শরিফ পডে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরার পর প্রথম রিকাতের মতো রুকু ও সজদা করতে হবে ॥ দ্বিতীয় রিকাতে দুই সজদা সম্পুর্ণ হলে ডান পা দাঁড করে এবং বাম পা বাছিয়ে অত্তাহিয়াত, দরুদ-এ- ইব্রাহিম ও দুয়া মাসুরা পডতে হবে, পডা শেষে একবার ডান দিকে ও পরে বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে সলাম করতে হবে ॥
বিঃ দ্রঃ - নমায পডার নিয়ম যেটা ওপরে লিখিত হল এটা পুরুষদের জন্য এবং শুধু ইমাম অথবা একলা পডার জন্য , এ নিয়ম মহিলাদের জম্য অথবা মুক্তদিদের জন্য নয় কারন মহিলাদের নমাযের মধ্যে কিছু  বিশেষ পার্থক্য আছে, যা পরে আলোচোনা করা হল এবং মুক্তদিদের জন্য পার্থক্য শুধু এটাই যে ইমামের পেছনে নমায পডাকালীন মুক্তদিরা সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা যেন না পডে , তারা যেন ইমামের কিরাত মনোযোগ দিয়ে শোনে ॥

এর আগের নমায সম্পর্কিত POST দেখার জন্য এখানে করুন